আনাতোলিয়া নামের ছোট্ট একটি গ্রামের একদল লোক কায়ী গোত্র নামে পরিচিত। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য এবং মঙ্গল দস্যুদের হাতে নিষ্পেষিত হতে হতে দিশেহারা তারা। তাদের জন্য মুক্তির বার্তা নিয়ে হঠাৎ হাজির হন গোত্র প্রধান সুলেমান শাহের পুত্র আরতুগ্রুল গাজী। এরপর নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে লড়াই শুরু করেন তিনি। ভিত্তি স্থাপন করেন উসমানী সাম্রাজ্যের। আর তারই পুত্র ওসমান তার বাবার অসমাপ্ত কাজকে পূর্ণাঙ্গরূপ দেওয়ার উদ্যোগ নেন। গড়ে তুলেন ন্যায় বিচারের উসমানী সাম্রাজ্য। সেই গল্প নিয়েই নির্মিত হয়েছে টার্কিশ ড্রামা সিরিজ ‘কুরুলুস: উসমান গাজী’ (Kuruluş: Osman)।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ড্রামা সিরিজটি। বিশ্বের ৭৩টি দেশে প্রচারিত দর্শকনন্দিত সিরিজটি আন্তর্জাতিক ভেনিস টিভি অ্যাওয়ার্ড ২০২০-এ সেরা সিরিজ নির্বাচিত হয়েছে।
কুরুলুস উসমান নামক এই ঐতিহাসিক ফিকশন টিভি সিরিয়ালটি অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা উসমান গাজীর (প্রথম উসমান) জীবনকাহিনীর উপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি উসমান গাজীর পিতা, আরতুগ্রুল গাজীর জীবনীর উপর মেহমেদ বোজদাগ নির্মিত মেতিন গুনেয় পরিচালিত বহুল আলোচিত, জনপ্রিয় ঐতিহাসিক ফিকশন টিভি সিরিজ দিরিলিস আরতুগ্রুল এর সিকুয়েল।
উসমান বে’র ভালোবাসা, সংগ্রাম, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গল্প, শত্রু ও বিশ্বাসঘাতক মোকাবিলা এই সিরিজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বুরাক অজচিভিট উসমান বে’র চরিত্রে, ওজগে তোরার উসমান বে’র স্ত্রী বালা হাতুনের চরিত্র অভিনয় করেন। এছাড়াও তামের ইগিত কায়ী বে, আরতুগ্রুল গাজীর চরিত্রে জীবন দান করেন।
উসমান গাজী বা প্রথম উসমান – আনাতলিয়ার বাইজেন্টাইন সীমান্তবর্তী এলাকার তুর্কমেন যাযাবর কায়ী গোত্রের প্রধান আরতুগ্রুল গাজীর ছেলে। কোচদাগ যুদ্ধে মোঙ্গলদের কাছে সেলজুক সাম্রাজ্য পরাজিত হলে, আনাতলিয়ার তুর্কমেনদের শক্তিশালী এই সাম্রাজ্য মোঙ্গলদের করদরাজ্যে পরিণত হয়।আরতুগ্রুল গাজী ছিলেন এই সাম্রাজ্যের অনুগত একজন তুর্কমেন বে। মোঙ্গলদের এই অভ্যুত্থানে তিনিও অন্যান্য তুর্কমেন বে’দের মতো নিজের বেইলিকের স্বাধীনতার বিনিময়ে কর পরিশোধ করতেন।
উসমান সফলতা পেতে থাকেন পক্ষান্তরে মোঙ্গলদের শাসনাধীনে থাকা সেলজুকরা শক্তি হারাতে থাকে। এতে করে সেলজুকদের উপরও মানুষের আস্থা কমতে থাকে। নেতৃত্বের গুণাবলি, যোগ্যতা সবই উসমানের মাঝে ছিলো। তাই কায়ী বসতির আশপাশের বসতিগুলো দ্রুত প্রভাবিত হয়ে উসমানের নেতৃত্ব মেনে নেয়। সর্বত্র উসমানের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। সেলজুকদের উপর মোঙ্গলদের প্রভাবে ইতিমধ্যে বিরক্ত জনগণ ধীরে ধীরে উসমানের পতাকাতলে একতাবদ্ধ হতে সীমান্তবর্তী এলাকার দিকে ছুটে যায়।
আরতুগ্রুল গাজীর মৃত্যুর পর পুত্র উসমান বে আসনে সমাসীন হন। উসমান বে ছিলেন দক্ষ, চতুর দয়ালু ব্যক্তি। তাই বে’রা নির্দ্বিধায় তাকে আরতুগ্রুল গাজীর স্থলাভিষিক্ত করেন। তবে উসমান বিশ্বাসঘাতকতার জন্য তার চাচা দুন্দার বে’কেও দয়া দেখাননি। সীমান্তবর্তী এলাকায় তিনি সম্রাট কর্তৃক নিযুক্ত ভূমিশাসকদের (তেকফুর) বিরুদ্ধে লড়াই করে।
আরতুগ্রুলের পুত্র উসমান
সবাই তাকে ‘কারা উসমান’ বলে ডাকতো। “কারা” শব্দটির অর্থ কালো। কারা উসমান দ্বারা সাহসী উসমান বুঝানো হয়েছে। ছুটন্ত ঘােড়ার উপর আরোহন করে তীর ছােড়া তার প্রিয় খেলা ছিলো। তার আরেকটি পছন্দনীয় খেলা, মঙ্গোলিয়ান কুস্তি। ঘােড়াটা দুরন্ত বেগে ছুটে চলেছে। দুই পা দিয়ে শক্ত করে ঘােড়াটার পিঠে আরোহন করে আছেন, এক সুদর্শন বলিষ্ঠ তরুণ।
তরুণের হাতে ছােটো একটা বাঁকানাে ধনুক। দু’পায়ের গােড়ালি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছে ঘােড়ার গতিপথ। ছেলেটির চোখ এই মুহূর্তে সামনের দিকে না পেছনে। দূরের একটা গাছে দারুণ একটা বেদানা দেখেছে সে। এই বেদানাটা তার খাওয়া চাই। অবশ্যই গাছে না ওঠেই। ওঘুজের হাতে তীর থাকতে ওঘুজ গাছে উঠতে যাবে কেন? তরুণ ঠিক করলো, ঘােড়াটাকে সােজা গাছের দিকে না ছুটিয়ে বিপরীত দিকে ছুটাবে।
সােজা ছুটিয়ে তীর দিয়ে বাচ্চারাও তো লক্ষ্য ভেদ করতে পারে। তাতে আর বাহাদুরির কী আছে? ঘােড়ার পেটে চাপ দিয়ে তরুণ ঘােড়ার বেগ আরও বাড়িয়ে দিলাে। প্রায় দুইশাে কদম এসে ঘােড়াটা যখন শূণ্যে লাফিয়ে উঠলো। ঠিক তখন সে ধনুকের ফলা থেকে তীর নিক্ষেপ করলো। বেদানাটা ভাল থেকে আলাদা হয়ে নিচে পড়ে গেলো। গাছের নিচে গিয়ে বেদানাটা তুলে নিল তরুণ। পাগড়ি খুলে ফেলে নিশ্চিত্তে খেতে শুরু করল সে। তার কুচকুচে কালাে চুল বলমল করে উড়ছিল আনাতােলিয়ার পাহাড় থেকে আসা বাতাসে। মোঙ্গল খান হালাকুর সৈন্যরা বাগদাদের দেয়াল ভেঙে শহরে ডুকে পড়েছিলো। সেই বছরের শীতেই আনাতােলিয়ার উত্তর-পশ্চিমে সােগুত নামের ছােটো এক শহরে আরতুগ্রুল বে’র ঘরে এক ফুটফুটে বাচ্চার জন্ম হয়। তার নাম রাখা হয় উসমান, অর্থ হাড় গুড়িয়ে দেওয়া পালােয়ান।
নিজের ভূমি বিস্তার শুরু করেন। উসমান এবং তার আল্পরা (সৈন্য) ছোট ছোট ভূমি জয় করতেন। উসমানের শায়েখ এদেব আলী আহি সংঘ নিয়ে সেখানে বাণিজ্যিক ঘাঁটি স্থাপন করতেন, খৃষ্টান অধ্যুসিত অঞ্চলের মানুষদের ইসলামের দাওয়াত দিতেন।
উসমানের দলবল ভারী হতে থাকে, শক্তিও বাড়তে থাকে। একদিন তিনি স্বপ্নে দেখেন শায়েখ এদেব আলীর বুক থেকে একটা চাঁদ উদিত হয়ে তার বুকে এসে আশ্রয় নেয় এবং বুক থেকে একটা বটবৃক্ষ বেরিয়ে আসে। এর শাখাপ্রশাখা গোটা বিশ্বকে আচ্ছাদিত করে। তিনি আরো দেখেন, কতগুলো তরবারি কনস্টান্টিনোপলের দিকে উড়ে যাচ্ছে।
পটভূমি
টিভি সিরিয়ালে ওসমানের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সংগ্রাম এবং তিনি কীভাবে উসমানীয় রাজত্ব প্রতিষ্ঠা ও নিয়ন্ত্রণ করেন তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি বাইজান্টাইন এবং মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রাম এবং কীভাবে তিনি বাইজেন্টাইন এবং মঙ্গোল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং তুর্কিদের সম্মান জানাতে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য রুমের স্বাধীনতা সুলতানি ঘোষণা করতে সক্ষম হয়েছিল তা চিত্রিত করে।
এই টিভি সিরিয়ালটি ওরগুজ তুর্কী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতার ব্যক্তিগত জীবন এবং সুলতান প্রতিষ্ঠার তাদের ইতিহাস শুরুর দিকে অন্তর্দৃষ্টি দেয়। ওসমানের চরিত্রটি তার সন্ধানে অনেক শত্রু এবং বিশ্বাসঘাতকদের মুখোমুখি হয়েছিল এবং শোতে চিত্রিত হয় যে কীভাবে তিনি এই বাধাগুলি কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন এবং তাঁর অনুগত সহচর, পরিবার এবং বন্ধুদের সহায়তায় তাঁর মিশনটি সম্পাদন করতে পেরেছিলেন।
সোর্সঃ https://quranfor.me/kurulus-osman-historical-fiction-turkish-television-series/